Monday, October 27, 2014

Birishiri: Natural Beauty of Bangladesh


বিরিশিরির সোন্দর্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদা মাটি পানির রঙটাকে যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন; সেটা কিন্তু না। আপনাকে যেতে হবে আরেকটু দূর বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়ে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল। সেই অপুরুপ সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য আমার হঠাৎ করেই হয়ে গেল। 

একদিনের ঝটিকা সফরে বিরিশিরিঃ
অফিস থেকে নেত্রকোনা যাওয়ার একটা প্রোগ্রাম হচ্ছিল। প্রথমে আমার যাওয়ার কথা না থাকলেও পরে এক কলিগের কারনে যাওয়ার সিদ্দান্ত নিতে হয়। ছোটবেলা  থেকেই নেত্রকোনা নামটার প্রতি একটি বিশেষ আগ্রহ ছিল কারন নেত্রকোনা নামটা কেমন জানি একটু কাব্যিক কাব্যিক মনে হয়। তাই আগ্রহটাও ছিল বেশ।
আল্লাহ্‌র নামে পূর্বনির্ধারিত  সময়ের এক ঘণ্টা পর যাত্রা শুরু করলাম কিন্ত গাজীপুর যাবার পর ট্রাফিক জ্যামে পড়লাম এবং রাস্তা বদলের সিদ্দান্ত নিতে হল। আমরা গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কের ভিতর হয়ে আর্মস কারখানার পাশ দিয়ে  যাব বলে গাজীপুর জঙ্গলের ভিতর ঢুকার পর এক রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি অনুভব করতে লাগলাম। কোন প্রকার বাহন নেই আশেপাশে নেই কোন জনমানব। মনে হচ্ছিল এই বুজি কেও আমাদের গাড়ির সমানে এসে দাঁড়ালো। এক আতঙ্কের মধ্যে জঙ্গল পেরুলাম। ময়মনশিং এর রাস্তার বর্ণনা আর নাই দিলাম। বিকেল পাঁচটায় যাত্রা শুরু করে রাত সারে বারোটায় নেত্রকোনা পৌঁছলাম। এর মাঝখানে একটু কথা না বললেই নয়। রাতে আমরা নেত্রকোনা UNO এর বাসায় রাতের খাবার খেলাম। তার আপ্যায়নে আমারা সবাই অনেক বেশি মাত্রায় খুশী ছিলাম। তিনি আমাদের হাওরের তাজা মাছ রান্না করে খাওয়ালেন যার স্বাদ ভুলতে কষ্টই হবে বৈকি।
তার পরদিন সকালের কাজ সেরে আমরা দুপুর সারে বারোটার দিকে বিরিশিরিতে পৌঁছলাম। বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত। নেত্রকোনা থেকে দুরগাপুর থানা ২০ কিলোমিটার হবে আর দুরগাপুর থেকে বিরিশিরর দূরত্ব হবে ৭ বা ৮ কিলোমিটার হবে।  দুর্গাপুর একটি বেসরকারি বাংলো ভাড়া করা ছিল ফ্রেশ হবার জন্য। বাংলো থেকেই আমারা মোটর সাইকেল ভাড়া করলাম প্রতিটার ভাড়া ৫০০ টাকা। মোটর সাইকেলে করে রওয়ানা হলাম। কিছুদুর  যাবার পর আমাদের নদী পার হতে হবে ট্রলারে করে। ট্রলারের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলাম তখন প্রকৃতির কিছু ব্যাপার দেখে খুব অবাক হলাম। নদীটি একদমই গভীর নয়, পানির স্রোতের সাথে বয়ে নিয়ে আসছে লাখ লাখ টন বালি। পুরো নদীটাই বালিতে চড় পরে গেছে যার ফলে ট্রলার বা ছোট নৌকা ও ঠিকমত চলতে  পারছেনা। নদীর টলটলে পানিতে নামার বর ইচ্ছে হল এবং নেমেও পড়লাম। মজার বিষয় হল স্রোতের সাথে পায়ের নিচের বালি সরে যাচ্ছিল। একটা কথা প্রায়ই শুনি যে পায়ের তলার মাটি থাকবেনা, বা মাটি সরে যাবে ইত্যাদি কিন্তু চোখে কখনো দেখিনি। নদীর পানিতে যখন নামলাম তখন সেটাও দেখা হয়ে গেল।  অনেকক্ষণ পর আমরা নদী পার হতে সক্ষম হলাম। যথারীতি মোটর সাইকেল চড়ে রওয়ানা হলাম। যতদূর এগুচ্ছিলাম ততই দুরের পাহাড় কাছে আসতে লাগল। প্রথম আমারা  পৌঁছলাম চুনা পাঁথরের পাহাড় দেখতে। খুব অবাক হয়েছি এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে। ছোট ছোট সবুজে ঘেরা কয়েক রঙের পাথরের পাহাড় ও নিল সাবুজাভ পানির লেক দেখে আপনার সব ক্লান্তি নিমিষেই বিলিন হয়ে যাবে।



বিরিশিরিতে যা আপনাকে আকৃষ্ট করবেঃ
বিচিত্রময় সাংস্কৃতিক আবহাওয়া, কংশ-টেপা-সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গম্ভীর গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায়  অনেক গুণ।
পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ধরূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য। বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমী। এখানকার আধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।
তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর আছে এখানে। অপেক্ষাকৃত কোলাহলমুক্ত ছোট্ট একটি বাজার। বিরিশিরিতে পা রাখতেই অন্য রকম এক অনুভূতির পরশ বুলিয়ে যায় সারা গায়। এখনে আছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমি। শান্ত-স্নিগ্ধ, সবুজে ঢাকা ছিমছাম পরিবেশ। পর্যটকদের চাপ বেশী থাকেনা। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই পাহাড়ী-গারো, হাজং। এখানকার পাহাড়ী বা পাহাড়ীদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল এই কালচারাল একাডেমী। পাহাড়ীদের সাংস্কৃতিক পরিচয় পাওয়া যাবে একাডেমীর জাদুঘরে। দুটি লাইব্রেরী আছে বেশ সমৃদ্ধ। পাহাড়ীদের ওপর লেখা সব বইপত্র, জার্নাল এখানে রক্ষিত। এখান থেকেও একটি সাময়িকী নিয়মিত বের হয়।

এ ছাড়াও যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর।
তারপর এসে পৌছাবেন বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমি সহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড় জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটি ও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাব নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল জল যেন আপনার সমস্ত অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এসব হ্রদের পানিতে চোখ পড়তেই দেখবেন আসার সব কষ্টগুলো নিমিষেই মিলিয়ে গেছে।
শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরুপ নীলের উৎস  সমেশ্বরী নদী। যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কথায় অসাধারণ!
এছাড়াও দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চুড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।

বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। এই কমলা রানী দীঘি সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। দীঘিটি পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

বিরিশিরির নিরিবিলি কোলাহলবিহীন ছিমছাম শান্ত পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না। এছাড়া দুচোখ যেদিকে যাবে দেখবেন শুধুই পাহাড়।



Photo Gallery of Birishiri:























 
 



  
  
  

No comments:

Post a Comment