কুতুবদিয়া থেকে ফিরে এসে ইয়ার ক্লোজিং, বোর্ড
মিটিং এর প্রস্তুতি ও দেশের বিরাজমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ইত্যাদি সব মিলিয়ে আজ বিশ
একুশ দিন পর লিখতে বসার একটু সুযোগ হল। যদিও বড্ড দেরি হয়ে গেল।
চলুন প্রথমেই যেনে নেই কুতুবদিয়ার অল্প স্বল্প কিছু ইতিহাস...
কিলোমিটার দূরত্ব বিশিষ্ট কুতুবদিয়া চ্যানেল। বাস্তবায়নাধীন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মহেশখালীর সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের মোহনায় অবস্থিত কুতুবদিয়া লবণ, মাছ, কৃষি ও খনিজ সম্পদের জন্য বিখ্যাত। উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, পেকুয়া ও মহেশখালীকে বঙ্গোপসাগরের সরাসরি বিক্ষুব্ধতা থেকে এ দ্বীপই রক্ষা করছে। দ্বীপের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আধ্যাত্বিক জগতের কান্ডারী হযরত শাহ্ আবদুল মালেক আল-কুতুবী (রাহ.) কুতুব শরীফ দরবার, কুতুব আউলিয়া (রাহ.) মাজার, প্রাচীন স্থাপত্য কালারমার মসজিদ, বিসিকের লবণ উৎপাদন প্রদর্শনী খামার, শুঁটকী প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, বায়ু বিদ্যুৎ, ঐতিহাসিক বাতিঘর ও সূর্যাস্তের খেলা। এ ছাড়া দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার বালিয়াড়ীযুক্ত সমুদ্র সৈকত যেন এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি। সমুদ্র সৈকতজুড়ে রয়েছে ছায়াঘেরা ও মনোলোভা ঝাউবিথী। প্রকৃতির অপরুপ সাজ-সজ্জার দ্বীপ-কুতুবদিয়াই হতে পারে সম্ভাবনাময় আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বেড়িবাঁধ, জাতীয় গ্রীড লাইনে বিদ্যুতায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হলে কুতুবদিয়া দেশের সম্পদে পরিণত হবে নি:সন্দেহে।
দীর্ঘদিন ধরে
কুতুবদিয়া দ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ দ্বীপ সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে উঠে
চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ধারণা করা হয়,
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ দ্বীপে মানুষের পদচারণা। “হযরত কুতুবুদ্দীন” নামে এক কামেল ব্যক্তিআলী আকবর, আলী ফকির, এক হাতিয়া সহ কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজ বিতাড়িত
করে এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়নরত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের
আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যাণ্বেষণে উক্ত দ্বীপে আসতে থাকে। জরিপ করে দেখা যায়,আনোয়ারা, বাঁশখালী,
সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আদিপুরুষের
আগমন। নির্যাতিত মুসলমানেরা কুতুবুদ্দীনেরপ্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবুদ্দীনের
নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরন করেন“কুতুবুদ্দীনের
দিয়া”, পরবর্তীতে ইহা‘কুতুবদিয়া’ নামে স্বীকৃতি লাভ করে। দ্বীপকে স্থানীয়ভাবে ‘দিয়া’
বা ‘ডিয়া’বলা হয়।
AHD Voyager's দের পদচারনায় ২৪টি ঘণ্টা মুখরিত ছিল কুতুবদিয়া দ্বীপ।
সেদিন তারিখটা
ছিল ২৪/১২/১৪। অফিস শেষে বাসা হইয়া কমলাপুর থেকে ট্রেনে চড়ার লক্ষে রওনা হলাম
কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের জন্য রেলের পুরো
একটি বগী বরাদ্দ ছিল। অফিসের সিনিয়র সহ মোট
২০ জনের একটি দল।
মেইল ট্রেন
সম্পর্কে আগে আমার কোন ধারনা ছিলনা এইবার বুঝতে অসুবিধা হয়নি। রাত ১১.০০ টার দিকে
ট্রেন ছারল চট্টগ্রামের উদ্দেশে, উপস্থিত হলাম পরের দিন ১১.৩০ এর দিকে। সবারই
অনেক খিদে পেয়েছিল। তাই সবকিছুর আগে একটা কিছু খেতে হবে। একটি রেস্টুরেন্ট খুঁজে
নাস্তাটা (Early Lunch ও বলতে পারেন) সেরে
নিলাম।
এতক্ষণ শুধু
বলা হল কিভাবে ও কখন গিয়েছিলাম। এইবার আশা যাক মুল কথায়ঃ
প্রায় তিন মাস
পূর্বেই নির্ধারিত ছিল যে অফিস থেকে একটি ট্যুরে কুতুবদিয়া যাচছি। প্রথম
সেন্টমারটিন যাবার কথা থাকলেও দুটি কারনে কুতুবদিয়াকেই বেছে নেওয়া হয়। সময়ের স্বল্পতা
ই এর মুল কারন ও যেকোন সময় ই সেন্টমারটিন জেতে পারব কিন্তু কুতুবদিয়া জেতে হলে
কয়েক জনের একটি দল না হলে একটু কঠিন ই হবে, যা হঠাৎ করে ই সম্ভব হয় না।
জীবিকার পেছনে
ছুটে চলা বন্দি মনটা কখনো কখনো অস্থির হয়ে উঠে, অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝে ও যখনই কোন
সুযোগ আশে ইট বালির জান্ত্রিক শহর থেকে বাইরে হারিয়ে যাবার জন্য। তেমনি একটি সুযোগ
আমাদের ফাইনান্স ডিপার্টমেন্ট এর জন্য কুদুব্দিয়া ভ্রমনের মাধ্যমে।
রাতে সবাই
নির্ধারিত বগীতে। পুরো একটি বগী বরাদ্দ করা ছিল আমাদের জন্য। আমাদের আশ্রাফ ভাই (Manager-Finance) ছিলেন এই রেলের
ব্যাবস্থাপনায়া, তাকে ধন্যবাদ জানাতে ই হয়। আমরা যার যার রুমে গিয়ে রিলাক্স হলাম ও
অপেক্ষা করছিলাম আমাদের কিছু সহকর্মীর জন্য যারা অপেক্ষা করছিলেন উত্তরা ষ্টেশনে।
কিছুক্ষণ পর উত্তরা থেকে তাদের রিসিভ করলাম বাকিদের এবং তারপর থেকে ই শুরু হল
ভ্রমনের আসল মজা। টিমের প্রত্যেকটি মানুষের অংশগ্রহণ এতো চমৎকার ছিল যে আনন্দ করার
জন্য কোন বিশেষ স্থানের প্রয়োজন নেই মোটেও। শুধু কিছু মানুষ আর সাথে একটু সুন্দর
মানুশিকতা যা আমাদের মাঝে ছিল পর্যাপ্ত। কথাটি একটু কাব্যিক কাব্যিক মনে হতে পারে
কিন্তু এর বাইরে সত্য কিছু নেই। আমাদের এক সহকর্মী তারেক ভাই আমার সাথে বলছিলেন যে
রাজীব ভাই, আমরা কেন ও কোথায় যাচ্ছি সেতা বর ইস্যু না, গুরত্তপূর্ণ বিষয়টা হল আমারা কারা যাচ্ছি সেতাই বর কথা।
অনেক হল কাব্ব চর্চা এইবার মূল বিষয়ে আশা যাক।
হই হুল্লোড়ের
মাঝে আমরা চারজন রাত দুইটার দিকে সুয়ে পড়লাম। আর তখন ই বাইরে থেকে শুরু হল রুমের
দরজায় কষাঘাত।এই অত্যাচার বেশ কিছুক্ষন চলতে থাকল। কি আর করা এই ভাবেই চলতে থাকল
রেল ভ্রমণ। মনে মনে ভাবছিলাম এদেরকে ও তো কিছু একটা রিটার্ন দিতে হয়! সকাল ৭ টার
দিকে ফ্রেশ হয়ে সবাইকে ডাকলাম যে, সবাই রেডি হইয়া নেন... একটু পর ই আমারা ষ্টেশনে
নেমে পড়ব। সবাইত উঠে তৈরি কিন্তু গন গন্তব্বের দেখা নেই। যথারীতি টপ টেরর রা আমার
উপর আবার চড়াও হল। তখন তাদের বললাম ভাইয়েরা রাতের কথা কি মনে আছে? শুধ বুধ হয়ে
গেল।
চাচা ঢাকা কত দূর!
চাচা ঢাকা কত দূর!
কিন্তু আসলে
আমরা কেও ই জানতাম না যে এতো সময় লাগবে। শেষে চট্টগ্রাম ষ্টেশনে হাজির হলাম দিনের
এগারোটা টা কি সারে এগারোটার পর। তারপর নাশতা শেষ করে রওয়ানা হলাম মগনামা
ঘাটের দিকে। যেখান
থেকে কুতুবদিয়ার চ্যানেল পারি দিয়ে তারপর দ্বীপে যেতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে বাসে
যেতে হয়। জাহাঙ্গির কবির ভাই একটি
মিনিবাস ভাড়া করলেন, উল্লেখ্য যে কবির ভাই সব কিছুর ই মূল দায়িত্তে ছিলেন
এবং শেষ পর্যন্ত সফল ভাবেই সব কিছু ই সম্পন্ন করেছিলেন। আর মনিরুল ইসলাম তালুকদার
(DGM Finance) ছিলেন মূল
উদ্যোক্তা।
ক্লান্তি শুরু
হল বাসে চড়তে চড়তে। পথের যেন আর শেষ নেই। যখন ই ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করি যে ভাই আর
কত দূর?ন্তা। এই একই উত্তর দেয় ...আর এক
ঘণ্টা। একবার বললাম ভাই ঠিক কইরা বলেন এক ঘণ্টা বাঝতে আর কয় ঘণ্টা বাকি!!! তখন
বহুল প্রচলিত একটা কথা মনে পরল, “চাচা ঢাকা কত দূর!”
সাগরের ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ সব ক্লান্তই যেন মুহূর্তে নিঃশেষ হইয়া গেল!
সাগরের ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ সব ক্লান্তই যেন মুহূর্তে নিঃশেষ হইয়া গেল!
অতঃপর সারে
চারটার কাছা কাছি সময়ে মগনামা ঘাটে হাজির হলাম। পৌঁছা মাত্র কুতুবদিয়া চ্যানেলের
ঠাণ্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগল। ঘাটে এসে যখন দাঁড়ালাম তখন সূর্য মামা লালছে রং ধারণ
করে অস্ত যাবার প্রস্ততি নিচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে মনির ভাইকে বললাম যে, ভাই সব
ক্লান্তি দূর হইয়া গেছে। সব কিছু ই জেন নতুন করে শুরু করতে পারব। যদি ও দুটি
পরোটা ছাড়া পেটে আর কিছু ই পড়েনি।
সবাই ট্রলারে
উঠে বসলাম, একটু জায়গা ও ফাকা নাই থাকলেই আর একজন বসবে। আমরা মনে মনে এক্ত এক্ত
ভয়ই পাচ্ছিলাম যে ট্রলার আবার ডুবে যাবেনাত! স্থানীয় লোকদের ভঁয়ের কথা ভাবাটাই
বুকামি। কারন এদের জীবন ই কাটে সাগরের মাঝে। ট্রলার চলল ঠিক পশ্চিম দিকে, ঘাত থেকে
দ্বীপটি দেখা যাচ্ছিলনা। শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম সূর্য মামার অস্ত যাবার অপরূপ
দৃশ্য। এর রূপের বর্ণনা দেওয়ার ক্ষমতা আমার লেখায় নাই।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী বিষাদময়!
মাগরিবের ঠিক কিছু পরেই আমরা কুতুবদিয়ার একমাত্র আবাসিক হোটেলে উপস্থিত হলাম। সবাই ফ্রেশ হবার পরে একমাত্র জরুরি কাজতি ই হল যত দ্রুত পেটে কিছু দিতে হবে। সুকান্ত বলেছিলেন “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়” আর আজ আমি বলছি ““ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী বিষাদময়” এই বিষাদময় পৃথিবীর জন্যত আর এখানে আসিনি, তাকে যে আনন্দময় বানাতে হবে। সবাই একসাথে বেরিয়ে পড়লাম খাবার হোটেলের দিকে। AHD Voyagers দের পদচারনায় কুতুবদিয়া বাজার তখন মুখরিত। ২০ জনের একটি দল যে দিকেই যাচ্ছি সেদিকেই স্থানীয় লোকজন অবাক হয়ে দেখছিল আমাদের। আমাদের পড়নে ছিল অফিসিয়াল টি শার্ট। হোটেলে বসে অপেক্ষা করছি খাবারের জন্য। সেখানে ও দেরি! দেরি আর সহ্য হয় না। বেচারা হোটেলের আর কি দুষ বলেন, এই সন্ধ্যা বেলায় ২০ জনের খাবার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছিল বেচারা। কেউ একজন হোটেল বয়কে বলল মামা খালি ভাতই দাও লবন দিয়ে খাই। এই ছিল অবস্থা। খাওয়াত অনেক হল... এইবার আশা যাক মূল বিষয়ে।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী বিষাদময়!
মাগরিবের ঠিক কিছু পরেই আমরা কুতুবদিয়ার একমাত্র আবাসিক হোটেলে উপস্থিত হলাম। সবাই ফ্রেশ হবার পরে একমাত্র জরুরি কাজতি ই হল যত দ্রুত পেটে কিছু দিতে হবে। সুকান্ত বলেছিলেন “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়” আর আজ আমি বলছি ““ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী বিষাদময়” এই বিষাদময় পৃথিবীর জন্যত আর এখানে আসিনি, তাকে যে আনন্দময় বানাতে হবে। সবাই একসাথে বেরিয়ে পড়লাম খাবার হোটেলের দিকে। AHD Voyagers দের পদচারনায় কুতুবদিয়া বাজার তখন মুখরিত। ২০ জনের একটি দল যে দিকেই যাচ্ছি সেদিকেই স্থানীয় লোকজন অবাক হয়ে দেখছিল আমাদের। আমাদের পড়নে ছিল অফিসিয়াল টি শার্ট। হোটেলে বসে অপেক্ষা করছি খাবারের জন্য। সেখানে ও দেরি! দেরি আর সহ্য হয় না। বেচারা হোটেলের আর কি দুষ বলেন, এই সন্ধ্যা বেলায় ২০ জনের খাবার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছিল বেচারা। কেউ একজন হোটেল বয়কে বলল মামা খালি ভাতই দাও লবন দিয়ে খাই। এই ছিল অবস্থা। খাওয়াত অনেক হল... এইবার আশা যাক মূল বিষয়ে।
মাছের বদলে মুরগী!
প্লান ছিল
সমুদ্রের মাছ দিয়ে BAR-B-Q করা হবে, অবাক
করার মত ব্যাপার হল মাছ পাওয়া গেল না। টিম লিডাররা সহজেই হাল ছাড়ার পাত্র নন। তাই BAR-B-Q হবে মুরগী দিয়ে। সে অনুযায়ী সমুদ্র সৈকতে সব
বেবস্থা করা হল। BAR B Q সেট সংগে করে
নেয়া হইছিল। এখন প্রয়জন শুধু খড়ি এবং কাঠ কয়লা। সৈকতের এক পাঁশে ডেকরেটর থেকে আনা
চেয়ার বসানো হল গোল করে আর মাঝখানে খরিতে আগুন জ্বালানো হল আর তার পাঁশে চলল কাঠ
কয়লার আঁচে BAR-B-Q. সৈকতের ঠাণ্ডা বাতাস
আর সব মিলিয়ে এক মন মুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। তার সাথে ছিল AHD Voyagers দের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এক কথায় সবাই মিলে
এক অপূর্ব সময় পার করলাম যা আবার ফিরে পাবার ভাগ্য সবার হবে কিনা! আমাদের সাথে
অফিসের সিনিয়ররা ও ছিলেন, তাঁদের প্রাণবন্ত ও ফ্রেন্ডলি অংশগ্রহণ আমাদের আর বেশি
উৎসাহ যুগিয়েছে। স্থানীয় কিছু লোকজন ও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন যা আমাদের আরও
বেশি রোমাঞ্চিত করে। মধ্যরাতে হোটেলে ফিরলাম এবং সবাই অনেক ক্লান্ত শরীর বিছানায়
এলিয়ে দিল। যখন ঘুম ভাঙল দেখি অনেকেই সৈকতে বেড়াতে চলে গেছেন। তাড়াহুড়া করে ছুটলাম সৈকতের পাণে।
সৈকতে ঘুরাঘুড়ি পর সকালের নাস্তা শেষ করলাম এবং তারপর দল বেঁধে ছুটে চললাম
কুতুবদিয়ার দর্শনিয় স্থানগুলি দেখার জন্য। একটি জীপ ভাড়া করা হল এবং সবাই মিলে
রওয়ানা হলাম প্রথমে বাতিঘর দেখার জন্য। বাতিঘরের কাছে যখন পৌঁছলাম তখন সাগরের
ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাঁপটা গাঁয়ে লাগলো। মনটা অস্থির হয়ে উঠল সৈকতে যাবার জন্য, সেই মত
বাতিঘরের ওয়াল পার হয়ে পৌঁছলাম সৈকতে এবং খুশিতে মনটা নেচে উঠল। কল্পনা ও করিনি
কখনো যে এতো সুন্দর একটি বীচ দেখতে পাব! ভাবতে বর অবাক লাগলো যে এতো সুন্দর বীচে
কোন পর্যটক নাই। কেউ কেউ বলল যে এখানের সমুদ্র অনেক গভীর ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল
না থাকার কারনে এখানে পর্যটক আসেনা। মনে অনেক প্রশ্ন নিয়েই সময় স্বল্পতার কারনে
ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চললাম দরবার শরীফ ও বায়ু
চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে রওয়ানা হলাম। কিছু সময় দরবার শরীফ ও বায়ু চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখলাম এবং বীচের
সৌন্দর্য উপভোগের পর রওয়ানা হলাম হোটেলের দিকে।
তারপর ফ্রেশ
হয়ে দুপরের খাবার শেষ করলাম। এরপর আমাদের র্যফেল ড্র অনস্থিত হল এবং গত রাতের সাংস্কৃতিক
পরিবেশনার পুরুস্কার বিতরন শেষে আবার রওয়ানা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।
কুতুবদিয়ার দর্শনীয় স্থানসমূহ
০১। কুতুবদিয়া
সমুদ্র সৈকতঃ
কুতুবদিয়া
উপজেলার পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ২০ কিঃমিঃ সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য্য
যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। সৈকতের সারি সারি ঝাউবাগান আর সমুদ্রের ঢেউ
এর নয়নাভিরাম দৃশ্যে যে কেউ খুব সহজেই আকৃষ্ট হবে। বিশেষ করে সৌন্দর্য্য পিপাসুখুব সহজেই আকৃষ্ট হবেন। অবকাঠামোগত
উন্নয়ন ঘটলে এ সমুদ্র সৈকতটিও হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন
কেন্দ্র। নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশের এই সমুদ্র
সৈকতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা
গেলে এ পর্যটন কেন্দ্র হতে বিপুল পরিমাণ বেদেশী অর্থ আয় করা সম্ভব হবে। কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতে প্রাকৃতিক গ্যাস এর
সন্ধ্যান পাওয়া গেছে।
এক কথায়, কুতুবদিয়া
সমুদ্র সৈকত এবং এতে বেড়ে উঠা বিভিন্ন আকৃতির ঝাউগাছের সারি সত্যিই যে কারো দৃষ্টি
আকর্ষণ করতে যথেষ্ট।
০২। বাতিঘরঃ
প্রাচীন কাল হতে কুতুবদিয়া বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত। দূর সমুদ্রের
মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ গুলোকে রাতের আঁধারে পথ প্রদর্শনের জন্য
১৮৪৬ সালে এ বাতিঘর নির্মিত হয়। রাতের আঁধারে যে সকল নৌকা মাছ
ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে গমন করতো সে সকল নৌকাকে তীর
প্রদর্শন করে স্থলে ভেঁড়ানোর কাজে এ বাতিঘরের ভূমিকা অপরিসীম।
বর্তমানে পূরাতন বাতিঘরটি সম্পূর্ণরুপে সমুদ্রগর্ভে বিলিন হয়ে গিয়েছে। নতুন একটি বাতিঘর এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এ
বাতিঘরটির আলো সমুদ্রের ৪০-৪৫ কিঃমিঃ দূর হতে
দেখা যায়। আর এ আলোর সাহায্যেই রাতের আঁধারে পথ হারানো
নৌকাগুলো পথ খুঁজে পায়। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে এ বাতিঘরটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কুতুবদিয়ায় আগমনকারী কোন
পর্যটকই এ বাতিঘরটি দেখার লোভ সম্ভরণ করতে পারে না।
এক কথায়, দেশের অন্যতম
ঐতিহাসিক নিদর্শন কুতুবদিয়া বাতিঘর এর সৌন্দর্য্য কুতুবদিয়াকে বহুলাংশে আকর্ষণীয়
করে তোলে।
০৩। দরবার
শরীফঃ
কুতুবদিয়ার দর্শনীয় স্থানসমুহের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত সাধক শাহ
আব্দুল মালেক আল কুতুবী মুহীউদ্দিন আজমীর মাজার ও দরবার
শরীফ। গাউছে মুখতার হযরত শাহ আব্দুল মালেক (রাঃ) ছিলেন
উপমহাদেশের প্রচার বিমুখ এক মহান আদ্যাত্মিক সাধক। তিঁনি
আধ্যাত্মিক প্রতিভাবলে ও বিশ্বলোকে গণ মানুষের মানস পটে চির অম্লান হয়ে আছেন। গাউছে মুখতার, মুজাদ্দীদে জামান
হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী মুহীউদ্দিন
আজমী ১৯১১ ইংরেজী ২১শে জুলাই শ্রাবন মাসের প্রথম জুমাবার নিজ
পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এই মর্যাদাবান বুজুর্গ পরিবার কক্সবাজার
জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধূরং গ্রামে অবস্থিত। তাঁর মহিমাময় পিতা হজরত হাফেজ শামসুদ্দীন আল কুতুবী (রাঃ) বড়
হাফেজ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নিজ বাড়িতেই হেফজখানা প্রতিষ্টা
করেন এবং দূর দূরান্ত থেকে ছাত্রগণ এখানে এসে কোর’আন শরীফ হেফজ করতেন এবং উৎকর্ষ অন্তর নিয়ে ফিরতেন। তাঁর
রহস্যময়ী সান্নিধ্য বালবিক দূর্বলতা বিমোচনে কার্যকরী ছিল। ৬২
বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ১৭ই নভেম্বর রোজ বুধবার
তিনি ইন্তেকাল করেন।
উপমহাদেশের খ্যাতনামা আধ্যাতিক সাধক মালেক শাহ অন্তিম শয়নে শায়িত হন
২০০০ সালের ১৯ই ফেব্রুয়ারী। তাঁর প্রথম নামেজে জানযা
অনুষ্টিত হয় চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ্য প্যারেড মাঠে সকাল ১০
টায় রোজ রবিবার। হালিশহরের পীর হযরত মাওলানা ইসমাইলের ইমামতিতে তাঁর
এই নামাজে জানাযা চট্টগ্রামে স্মরণকালের বৃহত্তম নামাজে
জানাযাহিসেবে আজও স্বীকৃত। দ্বিতীয় নামাজে জানাযাও একই জায়গায় অনুষ্টিত হয়।
তাছাড়া
কুতুবদিয়ার বায়ু চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের সৌন্দর্য ও আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিতভাবে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশের সৈকতের ঢেউ আপনাকে মাতিয়ে রাখবে।
Photo
Gallery of kutubdia Tour:
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjomHx_D7fbwQbJpHem7cUghycMKyTe3UoWSoQN-x_lop_kQyYfFlOBFnCnrXxQlTbbf6rMzCoQV_bgVmcSu-FCVMEKVH1stqVgDnqjXGNJZtvSvW-C1SbYboQWZcWSKrIzVQr81Q5yiWjS/s1600/AmarYellowPages-Kutubdia-Island-1.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiDkUKyNkPm-kkJihS7kS3Cq5Gl0Ro2TTp7jNEGgRLuZn9BDuoMdI20AJDBRLpD-RE1FTzb_U4SEfaN94J0UngOAbJVuIdfwy68iE6p6i__GRNy1YkX_IWIgvGXnyQ7oikPO9qUmZcBV89Z/s1600/10511289_10205568806688805_8051660898290392086_n.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhtuZrFM50N0quyr1LGZF91sUCvpZzGIi3o9vGSg_2vGHWn2O8-Om7ERLcS-kE2cB80R7CgVxXmQ79o1pVU9ZP3FxI0YLdKwh8Ay_6dJ7bXkyLuXTW2gvOONG-GHtYLn33GHMvrDqeBoqw8/s1600/Sunset_Kuakata.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj9ZU_C3_4XwsHTuj8MfixkO8iV1yc8Rqt_4ZNAbefLRGjfXDNMitVc-yTRlrIMHarfdobGGnc2D9N-vdopQ6rW63e3h16BKGg6teqHcxOctQn58gGVsgzN0PkqPTpPtUaKUI_VF5NR52Zk/s1600/sonadia1.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjkOpdbbBBe2lyj74fh_FViqXBVuvQRRYVJo_FvbiWLIgG2YhMDj6KTf9j3LzbdCq1RzVtkkx0v0QsTVhQuDSbjn4WfSH0EB-wcVTFVwhVwv7Ra_0jofzaLJ6hPa7d6N06YNYA37-uxDMuY/s1600/kutubdia_1224771760_10-IMG0577A.jpg)
my site sprawdź i wejdź to sprawa która mnie trapi
ReplyDelete