Saturday, August 13, 2016

বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলে মোড়ানো বর্ষা।


কত দিন কদম ফুলের গন্ধ নেওয়া হয় না। তাকানো হয় না মুগ্ধ দু’চোখে। তবুও এমন বাদল দিনে মনে পড়ে যায় কদম ফুলের কথা।  উন্মনা করে দেয় তার বর্ণ, গন্ধ, সৌন্দর্য। নেশাধরানো এ ফুলটি যেন আসে বর্ষার বারতা নিয়ে। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল উসকে দেয় স্মৃতিকে। প্রিয়জনের হাত থেকে কদম ফুল নেওয়ার মোহ যেন এ জীবনে কিছুতেই কাটতে চায় না। জীবন ভারি অদ্ভুত। এর তল খুঁজে পাওয়া যায় না। কত কঠিন ও জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তবুও মনটাকে আটকে রাখতে পারা যায় না। যা হাতের নাগালের মধ্যে নেই, যা চাইলেও পাওয়া যায় না, তার জন্য মন কেমন কেমন করে। যা আছে অনুভবে, যা আছে স্মৃতিতে, যা আছে দূরে, সেটাই কেন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।


আবার এসেছে সেই কদম ফোটার দিন। প্রকৃতিকে ধুইয়ে দিতে। আমাদের ভিতরের কাঠিন্যকে নমনীয় করতে। বৃষ্টি নামবে দু’কূল ভাসিয়ে। বুকের মধ্যে নামবে সুখের প্লাবন। কেউ নিশ্চয়ই প্রিয়জনের হাতে তুলে দেবে একগুচ্ছ ভালোবাসার কদম ফুল। কেউ দূরে কোথাও গিয়ে করবেন বৃষ্টির নিবিড় বন্দনা। কেউ কেউ বারান্দা কিংবা করিডরে দাঁড়িয়ে স্পর্শ করবেন বৃষ্টির উচ্ছ্বাস। একান্তই যদি এর কোনোটাই সম্ভব না হয়, তাহলে একটুখানি আনমনা নিশ্চয়ই হওয়া যাবে। স্মৃতিতে ভাসবে সুখের দিনগুলো। জাগিয়ে তুলবে অন্য এক আপনাকে।
‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান...’। রবি ঠাকুরের শ্রাবণসন্ধ্যায় গাওয়া গান আরো কাছে টানে বৃষ্টি আর কদম ফুলকে। যেন দুজন দুজনের চিরদিনের মিতা। তবে এদের সখ্য অনেক পুরনো। একজন আরেকজনের শুভেচ্ছাদূত।বর্ষা এলেই কদমের আনাগোনা, যার গন্ধ সুশোভিত করে তোলে দেহ-মন সারাক্ষণ। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় বৃষ্টি হয়ে উঠছে আরো বেশি কোমল। খাল-বিলে ভরাট পানিতে যেমন করে শাপলা সাজিয়ে তোলে, তেমনি চারপাশের পরিবেশকে মাতিয়ে এবং রঙিন করে দেয় কদম ফুল।
আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষাকাল। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঋতু হিসেবে বর্ষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা নাম নেই। বর্ষা যেন শুধু বাঙালির ঋতু। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ যুগে যুগে নগর কিংবা গ্রামবাসীকে মুগ্ধ করে এসেছে। তাই বর্ষা কবিদের ঋতু, রবীন্দ্রনাথ-নজরুালের ঋতু।
মেঘের ভেলায় ভেসে কদম ফুলের ডালি সাজিয়ে নবযৌবনা বর্ষার সতেজ আগমন ঘটে এদিনে। বৃষ্টি শুষ্ক মাটির বুককে ভিজিয়ে সতেজ করে দেয় তৃষ্ণার্ত গাছপালাকে। বৃষ্টির শীতল স্পর্শ জুড়িয়ে দেয় তপ্ত হূদয়। বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি ভিজিয়ে দেয় আমাকে। আর আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়েছি বৃষ্টিকে! কদম গাছগুলো সাদা-হলুদের মিশ্র রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস। বর্ষা মানেই বৃষ্টির রিনিঝিনি কিংবা নূপুর-নিক্বণ ধ্বনি।কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দু’চোখের কোণায় ভেসে ওঠে ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। কদমের সুঘ্রাণে তৃপ্ত করতে ইচ্ছে হয় কোনো তৃষিত হূদয়।
অনেকেই কথা রাখেনি, প্রকৃতি ঠিকই কথা রেখেছে। বর্ষার প্রথম কদম ফুল ফুটেছে। মৌসুমি বায়ুও এবার ঠিক সময়েই এসে পড়েছে। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা, গগন ভরিয়া এসেছে ভুবনভরসা।
বর্ষা তাই বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদই বটে। কিন্তু মানুষের ভুলে এহেন শরীর-মনজুড়ানো বর্ষাও অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে। বর্ষার সঙ্গে আসে বন্যা, ভাসিয়ে নিয়ে যায় শত শত ঘর বাড়ি, ফসলের মাঠ। এখন বর্ষা মানেই রাজধানীসহ বড় বড় শহরে জলাবদ্ধতার অভিশাপ। ইতিমধ্যে অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকার রাজপথে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে খানাখন্দ ভরা রাস্তা এবং অসময়ে নালা খুঁড়ে রাখার খামখেয়ালী। 

Photo Gallery of Kadam Flower:


















1 comment: